পাঠ- ৪ : খাদ্যে বিষক্রিয়া, কারণ, লক্ষণ ও প্রতিবিধান :

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা - স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি | NCTB BOOK

 আমরা যা খাই তাকেই খাদ্য বলা যায় না। বরং যা খেলে আমাদের শরীরের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি সাধন ও তাপ সংরক্ষণের কাজ সম্পন্ন হয় তাকে খাদ্য বলে। শারীরিক ক্রিয়াকর্মের কারণে প্রতিনিয়ত আমাদের শরীর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। খাদ্য দ্বারা আমাদের শরীরের এই ক্ষয়পূরণ হয় এবং দেহ কর্মক্ষম রাখে। তবে এ সকল খাদ্য হতে হবে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং সুষম। অতিরিক্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্যও আবার শরীরের উপকার না করে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। খাদ্য যদি দূষিত হয়ে পড়ে তাহলে দূষিত খাবার খেয়ে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। দূষিত খাদ্য বিষাক্ত এবং তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করে। যে খাদ্য বা পানীয় খাদ্যনালির ও পাকস্থলীর অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু দ্বারা বিষাক্ত হয় সে খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করলে ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়।

কারণ : সাধারণত ব্যাকটেরিয়া (Bacteria) দ্বারা সংক্রমিত অথবা টক্সিন (Toxin) বা বিশেষ ধরনের জৈববিষ দ্বারা খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ব্যাকটেরিয়া নানাভাবে খাদ্যে প্রবেশ করে। যেমন- খাবার তৈরি করে অনেকক্ষণ রেখে দিলে, খাবার তৈরির আগে, তৈরির সময় এবং পরে, বাজার থেকে সংক্রমিত খাদ্যদ্রব্য ক্রয়ের সময়, ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গের সংস্পর্শে বিভিন্নভাবে খাদ্য বিষাক্ত হতে পারে। আবার প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করলে তা পচে গিয়ে টক্সিন বিষ তৈরি হয়। এরূপ পচা খাদ্য গ্রহণ করলে ফুড পয়জনিং হবে। এছাড়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত জীবজন্তুর মাংস এবং জীব-জন্তুর সাথে নির্গত রোগজীবাণু দ্বারা সংক্রমিত খাদ্য, অপরিষ্কার হাত দিয়ে তৈরি খাদ্য, বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হাঁস-মুরগির মাংস, প্রভৃতিও খাদ্যে বিষক্রিয়ার অন্যতম কারণ।

বিষক্রিয়ার লক্ষণ : ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষিত খাবার থেকে পাকস্থলীর অন্ত্রে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়; ফলে বমি বমি ভাব, বমি, তলপেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা এবং পানিশূন্য হয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। আর টক্সিনজাত বিষাক্ত খাদ্য শরীরে মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করে। বমি, কোষ্ঠবদ্ধতা, দৃষ্টিশক্তির বিকৃতি, স্নায়ুর পক্ষাঘাত, দুর্বলতা প্রভৃতি উপসর্গ প্রকাশ পায়। এ ধরনের ফুড পয়জনিংকে বটিউলিজম বলা হয়। এরূপ বিষক্রিয়ার লক্ষণ খাদ্য গ্রহণের ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পরে দেখা যায়। যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণ না করলে রোগী কয়েক দিনের মধ্যে মারা যায় ।

প্রতিবিধান
১। খাদ্য প্রস্তুত করার পূর্বে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
২। সংক্রমণ থেকে খাদ্যকে সুরক্ষিত করার জন্য খাদ্যের প্রস্তুতি ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩। নিরাপদ দূষণমুক্ত পানি পান করতে হবে।
৪। কাঁচা শাক-সবজি, মাছ-মাংস যাতে রান্না করা খাবারের সংস্পর্শে না থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫। রান্না করা খাবার নির্ধারিত তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬। রান্নার কাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে।

চিকিৎসা : বমি বমি ভাব বা বমি হলে বমি নিরোধক ঔষধ গ্রহণ করতে হবে। পানিশূন্যতা রোধে মুখে খাওয়ার স্যালাইন ORS- (Oral Rehydration Solution) খেতে হবে। ফুড পয়জনিংয়ের ফলে মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে অথবা দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

কাজ-১ : কীভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয় তা ধারাবাহিকভাবে লেখ এবং শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন কর।

কাজ-২ : খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে বিষাক্ত খাবার খেলে কী কী লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং কীভাবে এর প্রতিবিধান করা যায় তার দুটি তালিকা আলাদাভাবে তৈরি কর।


 

Content added || updated By
Promotion